জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘যাঁদের বিরুদ্ধে আমরা একদিন রাস্তায় নেমেছিলাম, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁরাই আবার ফিরে এসেছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমে।’
আজ রোববার বিকেলে শেরপুরের থানা মোড় এলাকায় আয়োজিত পথসভায় সারজিস আলম এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি সিস্টেম একসময় ধান্দাবাজ, দুর্নীতিবাজ এবং সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর দখলে ছিল। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই পুরোনো কালপ্রিটরাই নতুনরূপে আবার প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ফিরে এসেছে।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘ভূমি অফিস থেকে সদর হাসপাতাল, থানা থেকে পৌরসভা—প্রতিটি জায়গায় কিছু লোক এখনো আছে, যারা জনগণের সেবক না হয়ে শোষক হয়ে উঠেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সেই প্রতিরোধের রাজনীতি করি; যারা দেশ ও জনগণের স্বার্থে ক্ষতিকর, তাদের মুখোশ টেনে ফেলাই আমাদের লক্ষ্য।’
সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা আর কাউকে অন্ধভাবে পীর মানব না। কেউ ভালো করলে বলব ভালো, কিন্তু খারাপ করলে সে যে–ই হোক, তার বিরুদ্ধেও আমরা কথা বলব। আমাদের বিবেক আমরা আর দল, মার্কা, গোষ্ঠী কিংবা প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ধক রাখব না।’
‘পুশ ইন’ করতে হলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের করুন’
‘পুশ ইন’ ইস্যুতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, পুশ ইন করতে হলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের করুন, শেখ হাসিনাকে করুন। সাধারণ জনগণকে সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দেওয়া চলবে না।
পথসভায় নাহিদ বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে যে গণ–অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল, তাতে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে দিল্লিতে পালিয়ে যান। এখন দিল্লি আওয়ামী লীগের শত শত সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিয়েছে। অথচ শেরপুরসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত সাধারণ জনগণকে বাংলাদেশে পুশ ইন করার চেষ্টা চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, সীমান্তে কোনো পুশ ইন ও হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কারও বিরুদ্ধে এখনো কোনো দৃশ্যমান বিচার হয়নি। বরং আওয়ামী লীগের দোসররা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে বসে আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গোপালগঞ্জে দেখেছি কীভাবে সন্ত্রাসীরা ছোবল মারতে চেয়েছিল। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, শুধু গোপালগঞ্জ নয়, বাংলাদেশে কোথাও মুজিববাদকে দাঁড়াতে দেব না।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘যারা এখনো প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ও এমপিদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন—তাঁদের বিরুদ্ধেও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন শেরপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী মো. লিখন। সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও যুবশক্তির সদস্যসচিব জাহেদুল ইসলাম।
পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) প্রীতম সোহাগ, কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম খান পাঠান প্রমুখ।
পথসভার আগে শেরপুর সরকারি কলেজের সামনের সড়কে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ মাহবুব চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু করা হয়। পদযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে থানা মোড়ে পথসভাস্থলে গিয়ে শেষ হয়। পথসভা শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা জামালপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেন।