ভাইরাল সেই ভিডিওটির আসল ঘটনা জানা গেল

শেরপুরের শ্রীবরদীতে অসুস্থ স্ত্রীকে মাটিতে পুঁতে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে- এমন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বৃদ্ধ স্বামীর শাস্তিও দাবি করেন অনেকে। তবে সরজমিনে জানা গেছে আসল ঘটনা। 

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর যাবত অসুস্থ স্ত্রীর সেবা করতে গিয়ে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত বৃদ্ধ তার স্ত্রীর প্রাকৃতিক কাজ সাড়ারা জন্য কিনে আনেন প্লাস্টিকের একটি কমোড চেয়ার। শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিকেলে সেই চেয়ার ব্যবহারের জন্য উঠানে গর্ত করেন শ্রীবরদীর কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের খোশালপুর কানিপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমান। এ সময় তার স্ত্রী বিছানায় প্রাকৃতিক কাজ সেরে ফেললে ক্ষোভে স্ত্রীকে টেনে-হিঁচড়ে ওই গর্তে কাছে নিয়ে এসেছেন, এ দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন বৃদ্ধের নাতি খোকন মিয়া।

খোকন মিয়া তার নানীকে উদ্ধার না করে ভিডিও ধারণ করেন এবং তার নানাকে বিভিন্নভাবে প্ররোচনা দেন। বৃদ্ধার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নিরাপদের সরিয়ে নেন। ফেসবুকে ইনকামের আশায় সেই ভিডিওটি নিজের ফেসবুক পেইজে ছড়িয়ে দেন খোকন মিয়া। সামান্য বিষয়কে বড় করার জন্য খোকন মিয়ার শাস্তি দাবি করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে খলিল তার স্ত্রী খোরশেদাকে সেবা করলেও কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। নিজের হাতে স্ত্রীকে গোসল করানো, খাবার তৈরিসহ নানা রকম সেবা করেন। তবে এত দীর্ঘ সময় নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে থেকে খলিলও কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। তাই এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন।

জানা গেছে, বৃদ্ধ দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ে প্রবাসে থাকেন, অপর এক মেয়ে অন্ধ থাকায় তিনি রাজধানীতে ভিক্ষাবৃত্তি করেন।
 
এ বিষয়ে খলিলুর রহমান বলেন, আমি ছাড়া আমার স্ত্রীর আর কেউ নেই। প্রায় ১০ বছর ধরে সে অসুস্থ হয়ে বিছানায় প্রাকৃতিক কাজ সারেন। আমি প্রতিদিন সেগুলো পরিষ্কার করি। কখনও আমি তাকে অবহেলা করিনি। শুক্রবার আমি একটি কমোড চেয়ার কিনে আনি। সেই চেয়ারটি উঠানো বসানোর জন্য গর্ত করতে থাকি। এসময় আমার স্ত্রীর প্রাকৃতিক ডাক এলে তাকে আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার কথা বলি। কিন্তু সে বিছানায় তা করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে আমি হঠাৎ রাগে, ক্ষোভে তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে এ ঘটনা ঘটাই। আমি এ বিষয়টি নিয়ে অনুতপ্ত।
 
শ্রীরবদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের হোসেন বলেন, ঘটনার কথা জানতে পেরে আমি সকালে খলিলুর রহমানের বাড়িতে গিয়েছি। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে  তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তিনি বলেন, মূলত তিনি তার স্ত্রীকে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে সেবা করে আসছেন। অপরিচ্ছন্ন, নোংরা আর দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে থেকে তিনিও কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। আমরা চেষ্টা করছি ওই দম্পতিকে কোনো বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিতে।

Check Also

সৌদিতে প্রবাসীর মৃত্যু: মরদেহ আনতে সরকারি সহায়তার আবেদন স্ত্রী-সন্তানের

মৃত মহসিন উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দনগরের বাসিন্দা। সৌদি আরবের রিয়াদে জয় মাহিয়ান ডিস্ট্রিকের রস্তানুরা …

‘চাঁদাবাজ দখলদাররা কেউ বিএনপির লোক না’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, দুষ্টু কিছু মানুষ আছে, তাদের দুষ্টু কাজের জন্য আমাদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *