নগদের আর্থিক অনিয়ম: ২৫০০ কোটি টাকা লুটপাট, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

গদের আর্থিক অনিয়ম: ২৫০০ কোটি টাকা লুটপাট, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

ঢাকা, বাংলাদেশ – মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ-এর বিরুদ্ধে ২৫০০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেনসিক অডিটে উঠে এসেছে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা, ই-কমার্স লেনদেন, এবং অবৈধ ই-মানি সৃষ্টির মাধ্যমে এই বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য।

সামাজিক সুরক্ষা ভাতা লুটপাট

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সামাজিক সুরক্ষা খাতের বিভিন্ন ভাতা নগদের মাধ্যমে বিতরণ করা হতো। ফরেনসিক অডিটে দেখা গেছে, ৪১টি অননুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে নগদ ১,৭১১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই অর্থ দেশের গরিব ও সমস্যাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত ভাতা হিসেবে বিতরণের কথা ছিল।

ই-কমার্স প্রতারণা

নগদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ১৮,২৩৩ জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৪৪ কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, আলাদীনের প্রদীপসহ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। গ্রাহকদের অভিযোগ, নগদ প্রলোভনমূলক ছাড়ের মাধ্যমে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল।

“ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নগদ সম্মিলিতভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল। ১৫-২৫% ছাড়ের লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের টাকা আটকে দেওয়া হয়,” – রাকিব হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

অবৈধ ই-মানি সৃষ্টি

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নগদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি সৃষ্টি করেছে, যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই অবৈধ ই-মানি সৃষ্টি রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে।

অর্থ পাচারের অভিযোগ

নগদের বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকা অর্থ পাচারের তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে অনিয়ম, বিশেষ করে ক্যান্ডেলস্টোন ইনভেস্টমেন্টস ও সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন, অর্থ পাচারের অভিযোগকে জোরদার করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ

বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে বৃহৎ তদন্ত শুরু করেছে। ২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল থানায় নগদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসক গত ১৮ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, যেখানে এসব অনিয়মের বিষয় উঠে এসেছে।

নগদের আইনি অবস্থান

নগদ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনে ২০১৯ সালে এমএফএস চালু করে, যদিও তখন শুধু তপশিলি ব্যাংকগুলোর এই সেবা চালানোর অনুমতি ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালে নগদকে অন্তর্বর্তীকালীন অনুমোদন দিলেও, প্রতিষ্ঠানটি এখনো পূর্ণ আইনি কাঠামোর মধ্যে আসেনি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *